আজ আমি সঙ্গীত জগতের এক বিশাল সম্ভারের কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই যা "প্রভাতসঙ্গীত" নামে পরিচিত। অনেকে হয়তো এ ব্যাপারে জানেন আবার অনেকেই হয়তো জানেন না। মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার সাম্প্রতিক কালে সঙ্গীত জগতে এক নব দিগন্তের পথিকৃৎ। ১৯৮২ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ১৯৯০ সালের ২০শে অক্টোবর পর্যন্ত তিনি ৫০১৮টি সঙ্গীত রচনা করেছেন। রচয়িতা নিজেই সুরকারও। অধিকাংশ সঙ্গীত বাংলা ভাষায় রচিত হলেও অন্য সাতটি ভাষায়ও তাঁর অজস্র রচনা রয়েছে। সেই ভাষাগুলি হল সংষ্কৃত, হিন্দি, ইংরেজী, ঊর্দু, অঙ্গিকা, মগহি, ও মৈথিলি। ভাববার বিষয় একজন মানুষ এত কম সময়ে এতগুলি ভাষায় এত সুরে এত গান কীভাবে রচনা করলেন। গানগুলি এখন কমবেশী পৃথিবীর সব দেশে গীত হচ্ছে। টিভি রেডিওতেও এর সম্প্রসারণ হতে দেখেছি। ধীরে ধীরে মানুষ এই গানের ভাব-ভাষা-সুর বৈচিত্র্যের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। আমি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এই গানের মর্মমূলে ঢোকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে ক্রমশঃ আলোচনা করার ইচ্ছা আমার আছে।
শ্রীপ্রভাতরঞ্জন  সরকার একজন আদর্শ মানব—মহামানব। একাধারে তিনি বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, অনন্য যুগসাহিত্যিক, আসাধরণ সঙ্গীতজ্ঞ, যুগস্রষ্টা অর্থনীতিবিদ, অভিনব ভাষাতত্ত্ববিদ, নব বিজ্ঞানতত্ত্বের উদ্গাতা -- বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন  এক অনন্যসাধারন পুরুষ। যাঁর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সর্ব মানবের সর্বাত্মক কল্যাণসাধন।  গানে গানে মানুষের প্রাণে প্রাণে তিনি এক নোতুন পৃথিবীর বার্তা পৌছিয়ে দিয়েছেন। সঙ্গীতের মাধ্যমে তিনি কী বলতে চেয়েছেন--আজকের সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে মানবতাবাদের দৃষ্টিতে তাঁর গানের সারকথা কী সেটাই আমরা আলোচনার মাধ্যমে দেখব। আলোচনার এই যাত্রাপথ তাঁরই একটা গান দিয়ে শুরু করা যাক।


মহাজাগতিক দোলায় দুলিয়ে ধরা হল সুন্দর কোন ভেদাভেদ নাই।
এসো রেষারেষি ভুলি সবে মিলে বলি একই মোরা একই থাকিব গো।
উঁচু নীচু নাই শাদা কালো নাই মোরা বিশ্বে সবাই ভাই ভাই।


একের দুঃখ সবার দুঃখ একের আকুতি সবার আকুতি
একেরই দোলায় দুলিছে বক্ষ অমিয় সাগরে একই গীতি
ভরে ভালোবাসা জাগাইয়া আশা ফোটাইয়া ভাষা সুমুখে চাই।
দিয়ে মিত্র অরাতি সবাকারে প্রীতি গেয়ে ক্ষমা গীতি এগিয়ে যাই।
(প্রভাতসঙ্গীত সংখ্যা-- ৬৩৯)  (ক্রমশঃ)